top of page
Writer's pictureSadhguru

তুঙ্গভদ্রা নদীর তটে সাধনা ও বিশেষ কাউকে শাম্ভবী দীক্ষা দান

এই ঘটনাটি অবধুতের রহস্যময় আধ্যাত্মিক যাত্রা থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রধানত তার স্ক্রিবল থেকে।



সাল ১৯৮০, বাবার সাথে চললাম শ্রীশৈলম। উদ্দেশ্য কৃষ্ণা ও তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে মাতঙ্গী ও প্রত্যঙ্গিরা সাধনা করতে। তখন আমার বয়স আট। আর সাধনার পরে বাবার সাথে ঘুরে দেখবো শ্রীশৈলম। সাধনা করতে গিয়ে সাধনার জায়গা খুঁজতে খুঁজতে পৌছালাম শ্রীশৈলম ড্যাম-এর কাছে। তখন সেই ড্যামের কাজ প্রায় শেষ। খুব শিগগিরই উদ্বোধন হবে। সামনে নির্বাচন তাই নির্বাচন কমিশনের আদেশ অনুযায়ী কোনো রকম উদ্বোধন করা যাবে না কোনো প্রকল্প। হয়তো জুন বা জুলাইতে হবে।


আমি গেছিলাম মে মাসে। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন ওখানে সাধনা করবো বলে আগের দিন রাতে পৌঁছে দুজনে বাস স্ট্যান্ডে থাকা বেঞ্চে বসে বসেই রাত কাটালাম।  পরের দিন ভোরে তৃতীয়া পড়তেই দুজনে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলাম ড্যামের কাছে একটা জায়গায়। চারিদিকে নোংরা আবর্জনা তার মধ্যেই বসতে হবে। মানুষ পশু পাখির বিষ্ঠা চারিদিকে। অসম্ভব দুর্গন্ধ। একটা সিমেন্ট বাঁধানো জায়গা।  একটা বড় অশ্বথ গাছ।  একটা কাক মরে পড়ে আছে।  একটু একটু করে পুব আকাশে সূর্য্য উঠছে।  রবির কিরণ আকাশের গায়ে এক লালিমা রেখে যাচ্ছে। হালকা একটা হাওয়া। আগের রাত্রে খুব গরম ছিল।  আমি আর বাবা পৌঁছেছিলাম তখন রাত সাড়ে আটটা। খাওয়া হয়েছিল দুজনের রুটি আর চিনি। আর কিছু জোটেনি। তাই সকালে বেশ খিদে খিদে পাচ্ছে। বসে গেলাম আমার বাবা আমার গুরু অবধূত আত্মানন্দকে স্মরণ করে। সঙ্গে সঙ্গেই সমাধিস্থ হলাম। দেবী অত্যন্ত উগ্র শক্তি।  খানিকক্ষণ এই ভাবে কাটলো। শুনেছিলাম তুঙ্গভদ্রার তীরে এই সাধনায় সফল না হলে সাধকের মৃত্যু অবধি হতে পারে। আমি যখন বসেছিলাম বাবার ঘড়িতে তখন ৫টা ১৫ মিনিট। ভাবছিলাম আরও সকালে এলে ভালো হতো।  এই সাধনার জন্য ঊষাকাল দরকার, দক্ষিন-পশ্চিম তাই ওখানে বাংলার পরে ঊষাকাল ধরা হয়। আমার মধ্যে একটা উৎকণ্ঠা ছিল যে ঊষা কাল পেরিয়ে গেলো না তো? আসলে রাতে তীব্র গরমে খুব কষ্ট হয়েছে।  চারটে নাগাদ দুজনেরই চোখ লেগে গেছিলো। তাই ঘুম ভাঙতেই ছুট।

 

সেই সমাধি ভেঙে যখন উঠলাম তখন দেখি বাবা ডাকছে। তাড়াতাড়ি দেখ। ততক্ষনে ভোরের আলো ফুটেছে।  দেখি একটি সৌম্য দর্শন যুবক জলের দিকে যাচ্ছে। কেমন যেন লাগলো।  এতো ভোরে এখানে তো কেউ আসে না। ছেলেটির পরনে লুঙ্গির মতো করে সাদা একটা ধুতি। তাকে ডাকলাম। বেশ কয়েকবার ডাকার পরে ফিরে তাকাল। আরও অনেকবার ডাকার পরে সে কাছে এগিয়ে এলো। আমার গলা শুনতে পাচ্ছিলো না বলে বাবাকে বললাম তুমি ডাক। বাবা একটু এগিয়ে গিয়ে হাত নেড়ে তাকে ডাকতে উঠে এলো। জিজ্ঞেস করলাম তুমি এত ভোরে নদীতে কি করতে যাচ্ছো। বললো স্নান করতে। স্নান করতে তো তোমার সঙ্গে তো কিছু নেই না বাথিং টাওয়াল না কিছু। স্নান করে তারপর? ও দেখালো দূরে একটা ব্যাগ রাখা।  ব্যাগ টা দেখতে অনেকটা আমাদের শান্তিনিকেতনের সাইড ব্যাগ গুলো মতো। ওর হিন্দির তে ইংলিশের টান বেশি। 


বেশ অবাক ছেলেটি।  আট বছরের একটা ছেলে ওকে এতো প্রশ্ন করছে কেন? আমি ওকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম তুমি তো সাধনা করো তা এতো দিন সাধনা করে কি করলে? শুধু আসন করলে কি যোগ হয়? বলল হ্যাঁ আমেরিকা থেকে ও ইন্ডিয়া এসেছে।  এক জন গুরু ওখানে ও ছিল প্রায় ১৪ বছর।  বললাম ১৪ বছর তো অনেক কসরত হলো satisfied হলে না।  যা খুঁজছো পেলে না। প্রথমে খুব অবাক হয়ে মাথা নিচু করে নিলো। 


বেশ আমি তোমাকে দীক্ষা দেব। এর মধ্যে কিছু কথোপকথন হয়েছে সেগুলো এখানে লিখলাম না। সবটাই তাঁর আগের গুরুকে নিয়ে। বললাম তুমি যে আলোক প্রাপ্ত হতে চাও তার জন্য যে দীক্ষা তোমার প্রয়োজন তার জন্য কি তুমি প্রস্তুত। সে একটু ভাবার সময় নিলো। তারপর বললো হ্যাঁ। 


তখনি তাকে দীক্ষা দিলাম। আগের ১৪ বছরে সে অনেকটা নিষ্কাশন করে ফেলেছিলো তাই তার ওদিন সময় লাগলো না। তাই নতুন প্রভাতের সূর্য্যকে সাক্ষী রেখে তার শাম্ভবী দীক্ষা দেওয়া সম্পূর্ণ হলো। ওই দিনই সে সেই আলোকপ্রাপ্ত হলো যাকে আমরা enlightenment বলি। দীক্ষান্তে এবং ওই সুতীব্র আনন্দের পর তার কাছে ২৫ টাকা গুরুদক্ষিণা নিলাম। 


আনন্দে তখন তাঁর দুচোখে অশ্রু। এর পরবর্তীতে সে কি করবে তাও  বলে দিলাম। দক্ষিণ ভারতে তুলো চাষ করতে বলে রোজগারের পথ করতে বললাম। ফার্ম হাউসের কথাও হলো।  আর সাধনার জন্য সব নির্দেশ দিয়ে আমরা উঠলাম। সেবা কাজ করার সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে এগিয়ে চললাম।


ব্রীজ পেরিয়ে এগিয়ে চললাম মন্দিরের দিকে। বাবা এক বিশেষ কারণে মন্দিরে ঢুকতে বারণ করলেন।ওই খানে পরিচয় হলো এক সাধকের সাথে।  সে বাবাকে চেনে। তাই অনেক কথা হলো। আমরা সেও সেদিন মন্দিরে ঢুকতে ব্যারন করলো। বাইরে থেকে মল্লিকার্জুন স্বামীকে প্রণাম করে দেবী ভ্রামরীকে প্রণাম করে চললাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে। ওখানে বসেই যা কথা হবে বলে সেই সাধুও আমাদের সাথেই চললেন। 




Kommentare


Die Kommentarfunktion wurde abgeschaltet.

Share this Page

Subscribe

Get weekly updates on the latest blogs via newsletters right in your mailbox.

Thanks for submitting!

bottom of page